দেওয়ানি মামলার ধাপসমূহ

the-lexbd-article post feature image

দেওয়ানি মামলার মাঝে অনেক ধরণের মামলা পড়ে। সব ধরনের মামলা নিয়ে আলোচনা করা এক পোস্টে সম্ভব না। আমরা ধারাবাহিকভাবে তা আলোচনা করবো। তবে অধিকাংশ দেওয়ানি মামলার ধাপসমূহ নিম্নে দেওয়া হলো-

আরজি দাখিল (Submission of Plaint)
সিভিল মামলার বা দেওয়ানি মামলার ধারাবাহিক ধাপগুলো মধ্যে সর্বপ্রথম পর্যায় হলো সেরেস্তাদারের নিকট মামলার আরজি দাখিল করা । আরজির সাথে ওকালতনামাসহ যে সকল দলিল এবং কাগজপত্রের উপর ভিত্তি করে বাদীর মামলার প্রমাণ নির্ভর করে সেই সকল দলিল ও কাগজপত্র এবং প্রয়োজনীয় কোর্ট ফিস, প্রসেস ফিস, ডাকযোগে সমন জারীর জন্য প্রয়োজনীয় প্রাপ্তি স্বীকার পত্র ( এডি) সহ দাখিল করতে হবে।

বাদী সরাসরি বা তার আইনজীবীর মাধ্যমে অথবা তার স্বীকৃত এজেন্টের মাধ্যমে আরজি পেশ করতে পারেন। [ দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ৩,৪,৬ ও ৭ এবং ধারা ২৬ এর দ্রষ্টব্য ]

আরজি পরীক্ষা ( Plaint test)
আরজি দাখিলের সাথে সাথেই নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করবার জন্য আরজি পরীক্ষা করে দেখা জরুরী।

(১) আদেশ ৭ এবং রুল ৯ এর চাহিদাগুলো অনুসরণ করা হয়েছে কি না ?

(২) মামলার বিষয়বস্তুর মুল্যায়ন সঠিক আছে কি না?

(৩) আরজির সাথে যথাযথ কোর্ট ফিস দেওয়া হয়েছে কি না?
যদি আদালতের নির্দেশ অনুসারে আরজির চাহিদা পুরণ করতে না পারেন, তাহলে আর্জি ফেরত দেয়া হবে।

পেশকারের নিকট প্রেরণ (Sent to Judge’s Assistant )
আরজি এবং আরজির সাথে সকল কাগজপত্র পরীক্ষা করার পর যদি কোন প্রকার ভুুল না থাকে তাহলে সেরেস্তাদার আরজিটি পেশকারের নিকট পাঠাবেন। এবার কোর্ট ফিস , প্রসেস ফিস, সমন এর কাগজপত্র এবং দলিলপত্রে অন্য কোন ক্রুটি দেখা দিলে সেরেস্তাদার আরজিটি বাদী কতৃক উক্ত ক্রুটি বা অনিয়ম সমাধান না করা পর্যন্ত উক্ত আরজি স্থগিত রাখতে পারেন।

পাঞ্চিং ও কোর্ট ফিস রেজিস্টারে লিখা (Punching and writing in the court fee register)
আরজি পাবার পর পেশকার আরজিতে সংযুক্ত কোর্ট ফি পাঞ্চিং করেন এবং কোর্ট ফি এর টাকার পরিমাণ বা অংক রেজিষ্টারে লিখেন।

আরজি পুনরায় সেরেস্তারের নিকট প্রেরণ (Plaint re-sent to Serestadar)
পাঞ্চিং এবং কোর্ট ফি রেজিষ্টারে এন্টি করবার পরে পেশকার আরজিটি পুনরায় সেরেস্তাদারে পাঠিয়ে দেবেন।

ফাইলিং রেজিস্টারে এন্ট্রি (Entry in the filing register)
এবার পেশকারের নিকট হতে আরজি পাবার পরে সেরেস্তাদার মামলার বিবরণ সুট ফাইলিং রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করবেন এবং আরজিতে মামলার প্রকৃতি, মামলার মূল্য , প্রসেস ফি, কোর্ট ফি , আদালতের এখতিয়ার ইত্যাদি বর্ণনা করে একটি প্র্রতিবেদন লিখে বিচারকের নিকট আরজিটি পেশ করবেন।

এবার বিচারক প্রতিবেদন পাঠ পূর্বক আরজিটি গ্রহণযোগ্য হলে আদালত প্রাথমিকভাবে তা গ্রহন করার অথবা গ্রহণযোগ্য না হলে প্রত্যাখ্যানের নির্দেশ দিয়ে অর্ডার সিটে প্রথম আদেশটি আদালত লিখেন।

সুট রেজিস্টারে এন্ট্রি (Entry in the suit register)
আদালত প্রথম আদেশটি লেখার পর সেরেস্তাদার আরজিটি তার সেরেস্তায় নিয়ে যান এবং সেটি টাইটেল সুট রেজিস্টারে মামলার যাবতীয় বিশদবিবরণ লিপিবদ্ধ করেন।এই মামলার বিবরণ রেজিস্টারে যে ক্রমিক নাম্বারে লিখা হয় সেটাই মামলার নাম্বার হিসেবে পরিগণিত হয়। যেমনঃ- দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ০১/২০২১ ।

সেরেস্তাদার কর্তৃক সীলকরণ (Attested by Serestadar)
এবার সেরেস্তাদার সকল সমন গুলোতে স্বাক্ষর করেন এবং সেই সমনগুলোতে আদালতের সীলমহর লাগান তারপর সমনগুলো পিয়নবহিতে লিপিবদ্ধ করে রাখেন।

নেজারতে প্রেরণ ( Sending Nezarat )
এরপর পিয়নবহিতে লিপিবদ্ধ করার পর সেরেস্তাদার সমনগুলো পিয়ন বইয়ের মাধ্যমে নেজারতে পাঠিয়ে দেন । এবার নাজির বা তার সহকারী পিয়ন তার বহিতে প্রাপ্তি স্বীকারের দস্তখত দিয়ে সমনগুলো গ্রহণপূর্বক সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারে সমনের একটি বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন।

প্রসেস বন্টন (Process distribution)
এবার নাজির সমনগুলো জারি করার জন্য প্রসেস সার্ভারদের মধে বিতরণ করেন এবং সংশ্লিষ্ট প্রসেস সার্ভারের নাম ও সমন ফেরতের তারিখ রেজিস্টারে লিখে রাখেন।
সমন ফেরত ( Return of summons)
এবার সমন জারির পর প্রসেস সার্ভার ফেরত সমনের পৃষ্ঠে জারি-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সহকারে ফেরত সমন নাজিরের নিকট দাখিল করেন। তারপর নাজির ফেরত সমনের উপর যথারীতি জারি কথাগুলো লিখে তার নিচে সীলযুক্ত স্বাক্ষর প্রদান করেন। অতঃপর তিনি সেটি হাওলা-রেজিস্টারে জারিকারকের নামসহ জারি-সম্পর্কে একটি বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন।

সেরেস্তাদারের নিকট প্রেরণ (Sent to Serestadar)
এবার নাজির পিয়ন বইয়ের মাধ্যমে ফেরত সমনগুলো সেরেস্তাদারের নিকট পাঠিয়ে দেন এবং সেরেস্তাদার সমনগুলোকে মামলার নথির সাথে সংযুক্ত করেন।[বি:দ্র: ডাক সমন রেজিট্রি করার রসিদ এবং প্রাপ্তি স্বীকার পত্র ( এডি ) নথিতে সংযুক্ত করতে হবে]

পেশকারের নিকট প্রেরণ (Sent to Judge’s Assistant)
এবার সেরেস্তাদার নথিটি বিবাদীর হাজিরার জন্য ধার্য তারিখে পেশকারের নিকট প্রেরণ করবেন। এবার পেশকার আরজিটি এজলাসের বিচারকের নিকট পেশ করবেন।

বিবাদীর হাজিরা (Defendant’s presence )
এই পর্যায়ে হাজিরার জন্য ধার্য তারিখে বিবাদী আদালতে হাজির হয়। যদি বিবাদী ধার্য তারিখে হাজির না হয় তাহলে আদালত মামলাটি একতরফাসুত্রে নিস্পত্তি করতে পারেন।বিবাদির হাজিরার তারিখে লিখিত বর্ণনা (written statement) দাখিল করতে হয় ।

সেদিন লিখিত বর্ণনা (written statement) দাখিল করতে না পারলে বা লিখিত বর্ণনা প্রস্তুত না থাকলে বিবাদী সময়ের প্রার্থনা ( Time petition ) এর দরখাস্ত দিতে পারে এবং আদালত ইচ্ছে করলে তা মঞ্জুর করতে পারেন।

এই পর্যাযে বাদী যদি উপস্থিত না থাকে অথবা বাদী বিবাদী উভয় পক্ষই অনুপস্থিত থাকে তাহলে আদালত মামলাটি খারিজ দিতে পারেন। [বি:দ্র: আদেশ ৯ ]

লিখিত বর্ণনা দাখিল (Submit written statement)
এবার বিবাদীর হাজিরার পর লিখিত বর্ণনা ( written statement ) দাখিলের কাজ শুরু। লিখিত বর্ণনা দাখিলের তারিখে বিবাদী লিখিত বর্ণনা ( written statement ) দাখিল করতে না পারলে আদালত বিবাদীর প্রার্থনাক্রমে লিখিত বর্ণনা ( written statement ) দাখিলের জন্য পুনরায় সময় দিতে পারেন অথবা মামলাটি একতরফাসুত্রে নিস্পত্তি করতে পারেন।[ বি:দ্র: আদেশ ৮ ]

প্রথম শুনানী ( First hearing)
এবার আদালত আরজির বর্ণনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা অর্জন এবং মামলার প্রকৃত বিচার্য বিষয় ( Cause of action ) নির্ণয়ের জন্য উভয় পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করেন। প্রথম শুনানির সময় আদালত বাদী ও বিবাদীর আরজি এবং লিখিত বর্ণনায় যে সকল বিষয় সরাসরি বা পরোক্ষভাবে স্বীকার বা অস্বীকার করেনি সেগুলো স্বীকার বা অস্বীকার করেন কিনা জিজ্ঞাসা করেন।

ছানী মামলা ( Cataract case )
(১) ছানী মামলার ক্ষেত্রে ৯ আদেশের ৪ নিয়ম অনুযায়ী মোকদ্দমার শুনানিকালে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষই অনুপস্থিত থাকায় মামলা ডিসমিস হলে, বাদী সঙ্গত কারণে দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ আদেশের ৪ নিয়মে ছানী করে পূর্ব ফাইলে ও নাম্বার মোকদ্দমা পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।

(২) ছানী মামলার ক্ষেত্রে ৯ আদেশের ১৩ নিয়ম অনুযায়ী মোকদ্দমার শুনানির দিন বাদীর অনুপস্থিতির কারণে মামলা খারিজ হলে বাদী সঙ্গত কারনে দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ আদেশের ৯ নিয়মে ছানী করে মোকদ্দমা পূর্বের ফাইলে ও নাম্বারে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন।

(৩) ছানী মামলার ক্ষেত্রে ৯ আদেশের ১৩ নিয়ম অনুযায়ী মোকদ্দমার শুনানির দিন বিবাদীর অনুপস্থিতির কারণে মোকদ্দমা এক তরফা ডিক্রি হলে , বিবাদী সঙ্গত কারণে এক তরফা ডিক্রি রদ রহিতের জন্য দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ আদেশের ১৩ নিয়মে ছানী করতে পারেন বা আপীল করতে পারেন এবং আদালত সাক্ষ্য -প্রমাণের উপর ভিত্তি করে যথাযথ মনে করলে এক তলফা ডিক্রি রদ রহিতক্রমে মোকদ্দমা পুনবির্চারের জন্য মামলাটি পুর্বের ফাইলে ও নাম্বারে পুনরুজ্জীবীত করতে পারেন।

সিভিল মামলার ধারাবাহিক ধাপগুলো একজন আইনজীবীর জন্য কতটা জরুরী!
Development of civil cases!

বিচার্য বিষয় নির্ধারণ ( Determining the subject to be judged)
লিখিত বর্ণনা ( written statement ) দাখিলের পর এবং আরজি ও বর্ণনার বিষয়বস্তুু সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা অর্জন করার পর আদালত বিচার্য বিষয় নির্ণয় করেন। মনে রাখতে হবে মামলার বিচারকালে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

মুল কারণ হলো আরজি এবং বর্ণনা নয় বরং বিচার্য বিষয়ই যথাযথ সাক্ষ্য প্রদানের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।বিচার্য বিষয় দু রকমের হয়ে থাকে । (১) আইনগত বিচার্য বিষয় এবং (২) ঘটনাগত বিচার্য বিষয় ।

প্রথম শুনানির সময় যদি আদালত মনে করেন যে, বাদী-বিবাদীর মধ্যে আইনের বা ঘটনার কোন বিচার্য বিষয় নেই তাহলে আদালত সাথে সাথে মামলার রায় ঘোষণা করতে পারেন। [ Order 15,Rule 1 & 2 ]

ডিসকভারী, ইনসপেকশন এবং এডমিশন ( Discovery, inspection and admission)
এই পর্যায়ে ডিসকভারীর দ্বারা মামলার কোন দলিল বা কোন স্বীকারোক্তি সম্পর্কে একপক্ষ অপর পক্ষকে প্রয়োজনীয় কোন বিষয় বা তথ্য প্রকাশে বাধ্য করতে পারে বা চলমান মামলার সাফল্য অথবা প্রতিপক্ষের মামলার পরাজয় বয়ে আনতে সহায়ক হয়।

আরজি বা লিখিতি বর্ণনায় বাদী বা বিবাদীর মামলা সম্পুর্ণরুপে স্পষ্ট নাও হতে পারে। এই কারণে ডিসকভারী, ইনসপেকশন এবং এডমিশন এর বিধান সংযোজিত হয়েছে।মামরার একপক্ষ অপর পক্ষকে কোন বিষয় লিখিতভাবে প্রশ্ন করতে পারেন এবং তার পরিপেক্ষিতে অপর পক্ষকে লিখিত জবাব দিতে হয় ।

এটাকে প্রশ্নের মাধ্যমে কোন ঘটনার উৎঘাটন বলা হয় । একপক্ষ অপর পক্ষের দখল অথবা আওতাধীন কোন দলিল সম্পর্কে কোন তথ্য জানার প্রয়োজনবোধে অপর পক্ষকে উক্ত দলিল প্রকাশে বাধ্য করার জন্য আদালতে প্রার্থনা করতে পারেন।

আদালত তাকে উক্ত দলিল পর্যালোচনা করার বা পড়ার এবং তার নকল নেওয়ার অনুমতি দিতে পারেন। একে দলিল উৎঘাটন বলা হয়। একপক্ষ অপর পক্ষকে মামলার কোন দলিল বা কোন ঘটনা স্বীকার করার জন্য লিখিত নোটিশের মাধ্যমে আহ্বান করতে পারেন। এইরুপ নোটিশের প্রেক্ষিতে লিখিতভাবে অপর পক্ষ যদি অনুরুপ স্বীকারোক্তি করেন তাহলে তাকে নোটিশের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি বলা হয় ।

দলিল দাখিল, আটক রাখা, ফেরতদান এবং তলব (Submission of documents, detention, refund and summons)
যে সকল দালিলিক সাক্ষ্য পূর্বে দাকিল করা হয়নি প্রথম শুনানির সময় পক্ষগণকে সেগুলো অবশ্যই দাখিল করতে হবে। এছাড়াও আদালত যদি অন্য কোন দলিল দাখিলের অনুমতি দেন তাও দাখিল করতে হবে। [ Order 13, Rule 1 ]

ছোলেনামা (Solenama)
আদালত মামলার যে কোন অবস্থায় আপোস-মীমাংসা করে আদালতে ছোলেনামা দাখিল করতে পারেন এবং উক্ত ছোলেনামার শর্ত আইননানুগ হলে উক্ত ছোলেনামার শর্ত অনুসারে মামলা নিস্পত্তি হবে এবং ছোলেনামা ডিক্রির একাংশ বলে গণ্য হবে।

The-Basic-Steps-of-Civil-Litigation
The-Basic-Steps-of-Civil-Litigation
মোকদ্দমা উঠিয়ে নেওয়া ( Withdrawal of litigation)
মামলা উঠিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মামলার গঠনপ্রণালীতে কোন ক্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দিলে এবং উক্তরূপ ক্রুটি সংশোধনযোগ্য না হলে বাদী তার আরজি উঠিয়ে নিয়ে আরজিটি যথাযথভাবে পুনর্গঠন করে পুনরায় মামলা দাখিল করতে পারবেন।

সাক্ষীর প্রতি সমন ( Summons to witnesses)
এবার চুড়ান্ত শুনানির তারিখ নির্ধারণের পূর্বে মামলার শেষ পর্যায় হল সাক্ষীদের প্রতি সমন প্রদান করা। কমিশনের মাধ্যমে কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের প্রার্থনা যথাসম্ভব শীঘ্রই করা উচিত। [ বি:দ্র: কোন বিশেষজ্ঞকে সাক্ষী হিসেবে ডাকতে হলে তাকে দেওয়ানী কার্যবিধির ২৬ আদেশের ২ নং বিধান অনুযায়ী যথেষ্ট সময়ের পূর্বে আদেশটি পালন করা উচিত।

Development of civil cases!
সিভিল মামলা
চুড়ান্ত শুনানির তারিখ ( Final hearing date)
অবশেষে এই পর্যায়ে চুড়ান্ত শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

চুড়ান্ত শুনানি ( Final hearing )
এই পর্যায়ে মামলার পক্ষগণ প্রথমে স্ব স্ব মামলার বিষয়বস্তুু সম্পর্কে আদালতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করেন এবং কাঠগঢ়ায় শপথপূর্বক বাদী-বিবাদী ও তাদের সাক্ষীগণ সাক্ষ্য-প্রদান করেন এবং আদালত সাক্ষীগনের প্রদত্ত সাক্ষ্য যথাসম্বভ হুবহু লিপিবদ্ধ করেন। তবে যদি আদালত মনে করেন কোন অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের জবাব আদালত ইচ্ছে করলে নাও লিখতে পারেন। এভাবে মামলার বিষয়বস্তুু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত শুনানিকে মামলা শুরু বলা হয়।

যুক্তিতর্ক ( Argument )
এই পর্যায়ে শুরু হয় বিজ্ঞ কৌসুলীর আইনী যুক্তিতর্ক ‍উপস্থাপনের ধার্যকৃত দিন। এদিন বাদী-বিবাদী ও উভয় পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের পর যুক্তিতর্ক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই যুক্তিতর্কের মূল উদ্দেশ্য হল, মামলার মুরু হতে শেষ পযন্ত সকল বিষয়ের সংক্ষিপ্তসার বিচারকের সামনে তুলে ধরা হয় এবং বিচারকের যাবতীয় সন্দেহ সংশয় ও জটিলতা দুর করে বিচারকের মনে মামলা সস্পর্কে একটি নিখুত ও স্বচ্ছ ধারণা প্রতিষ্ঠা করা ।

যুক্তি তর্কের সাধারন নিয়ম হল, বিবাদী প্রথম তার যুক্তিতর্ক পেশ করবে এবং পরবর্তীতে বাদী তার জবাব দেবে। যদি বিবাদী কোন সাক্ষী না দিয়ে থাকে তবে বাদী প্রথম যুক্তিতর্ক পেশ করবে এবং বিবাদী পরবর্তীতে তার জবাব দেবে। এটা অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে যে, ‍যুক্তিতর্ক যেন স্পষ্ট, আইনসম্মত, গ্রহণযোগ্য, সুবিন্যস্ত এবং সংক্ষিপ্ত হয়।

রায় ঘোষণা ( Judgment announced)
এবার যুক্তিতর্ক শুনানির পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে আদালত বাদী-বিবাদীর স্ব স্ব বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তুু , মামলার বিচার্য বিষয় , সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আলোচনা ও যুক্তি এবং সর্বশেষ আদেশ ইত্যাদি ধারাবাহিক ভাবে বিষদভাবে লিপিবদ্ধ করবেন।

ডিক্রি (Decree)
রায় ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে আদালতে ডিক্রি প্রস্তুত করা হয়। কোন কোন মামলায় দুবার ডিক্রি দিতে হয়। প্রথমবার প্রাথমিক ডিক্রি এবং পরে চুড়ান্ত ডিক্রি দেওয়া হয়।

ডিক্রি জারি (Decree issued )
দেওয়ানী মামলার সর্বশেষ স্তর হলো ডিক্রি জারি । ডিক্রিতে যদি বিবাদীর প্রতি ডিক্রি কার্যকর করার নির্দেশ থাকে এবং তদানুযায়ী বিবাদী যদি ডিক্রি কার্যকর না করে তাহলে বাদীকে আদালতযোগে উক্ত ডিক্রি কার্যকর করার জন্য দরখাস্ত করতে হয়। একে ডিক্রি জারি মোকদ্দমা বলা হয়। অবশ্য ডিক্রি জারি মোকদ্দমার কিছু ভিন্ন স্তর রয়েছে।

Judgment Review
রায় রিভিউকরণ (পুনঃমূল্যায়ন) (Judgment review )
বিচারকালে যদি অত্যাবশ্যকীয় দলিলাদি সম্বন্ধে পক্ষগণ অবগত না থাকে অত্যাবশ্যকীয় দলিল নথিতে থাকা সত্ত্বেও ভুলক্রমে বিচারে প্রমাণ না হয়ে থাকলে বা অন্যান্য সঙ্গত কারণে পক্ষগণ রায়টি রিভিউ করার জন্য আদালতে দরখাস্ত দিতে পারে এবং আদালত পরীক্ষান্তে সঙ্গত কারণে রায় সংশোধন করতে পারেন।

আপীল ( Appeal)
এবার পক্ষগণের মধ্যে যে কোন পক্ষ বিচারিক আদালতে অকৃতকার্য হলে, তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করতে পারেন

Related Articles

অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারিত হলে কি করবেন ?

করোনা মহামারিতে যেমন একদিকে বেড়েছে অনলাইনে কেনাকাটা তেমনি বেড়েছে অনলাইনে  প্রতারণা। প্রায়শই শোনা যায় ফেসবুক পেইজ, ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ কিনবা বাংলাদেশের অনলাইন মার্কেট থেকে…

Responses

Your email address will not be published. Required fields are marked *